অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অলিভ অয়েল মূলত হচ্ছে জলপাই তেল। অলিভ অয়েল তেল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি। সাম্প্রতিক সময়ে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা নিয়ে ব্যাপক গভেষণা হয়েছে। এটি এমন একটি তেল যা রান্না থেকে শুরু করে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়। এক সময় অলিভ অয়েল শুধু রান্নার জন্য ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বর্তমানে শুধু রান্না নয় ঔষধ তৈরি থেকে রূপচর্চা বিভিন্ন কাজে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করা হয়।

অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি

অলিভ অয়েলে ভিটামিন ই, আয়রন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। শুধু তাই নয়, অলিভ অয়েলে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। গ্যাস এবং হজমের সমস্যা দূর করতে অলিভ অয়েল অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে ক্যান্সার এর মতো রোগ হওয়্যার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। তাছাড়া হার্ট সতেজ রাখতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখে অলিভ অয়েল। তাই চলুন আজকে অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি জেনে আসি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

অলিভ অয়েল তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বিভিন্ন সময় মৌসুমি সংক্রমণ এর কারণে আমরা নানান রোগে আক্রান্ত হই। অলিভ অয়েল এর ব্যবহার আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে মৌসুমি সংক্রমণ এর হাত থেকে রক্ষা করে। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

দ্রুত ওজন কমাতে অলিভ অয়েল ব্যাপক ভূমিকা রাখে। অনান্য তেল ব্যবহার করলে আপনার ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমরা যেসব তেল দিয়ে খাবার রান্না করি তাতে প্রচুর চর্বি থাকে যা আমাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদের সৃষ্টি করে। অলিভ অয়েল তেলে চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে। তাই অলিভ অয়েল দিয়ে খাবার রান্না করে খেলে আপনার ওজন কমতে পারে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অলিভ অয়েল অনেক কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। আপনার হার্ট যদি দূর্বল হয় তাহলে অলিভ অয়েল ব্যবহার আপনার হার্টের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বির যোগান দেবে। অলিভ অয়েলে থাকা মনোঅনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লোহিত রক্তকণিকাগুলিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। লোহিত রক্তকণিকা ক্ষতির ফলে হার্ট অ্যাটাক, হৃদরোগ, স্ট্রোকের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূরীকরণে অলিভ অয়েল তেল

ভুল খাদ্যাভ্যাসের জন্য মানুষ প্রায় সময় পেটের নানান সমস্যায় ভুগে থাকেন। কোষ্ঠকাঠিন্য যার মধ্যে অন্যতম। নিয়মিত অলিভ অয়েল তেল সেবন করলে কষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। অলিভ অয়েল তেলে রয়েছে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট যা কিনা পাকস্থলীর সমস্যা দূরীকরণে অনেক উপকারে আসতে পারে। তাছাড়া অলিভ অয়েল তেল পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল তেলে রয়েছে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে। এইসব উপাদান শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের উন্নতি করে না, পরিপাকতন্ত্র ভালো করে সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্যও সেরে যায়।

ডায়াবেটিসের জন্য অলিভ অয়েল তেল

ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে আরও একটি জটিল রোগের সম্মুখীন হয় মানুষ তা হচ্ছে ডায়াবেটিস। বিশেষ করে এশিয়ান অঞ্চলে এ রোগে আক্রান্ত মানুষ বেশি দেখা যায়। খাদ্যাভ্যাস কর্মজীবন নানান কারণে এশিয়ান অঞ্চলের মানুষ ডায়াবেটিসে বেশি আক্রান্ত হন। একবার ডায়াবেটিস হলে তা থেকে পরিত্রান পাওয়ার কোন উপায় নেই। তবে চাইলেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। একবার যদি কারো ডায়াবেটিস হয়ে যায় তাহলে তাকে অনেক সতর্ক থাকতে হবেএবং খাদ্যাভ্যাসের উপর বিশেষ যত্ন নিতে হবে। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে অলিভ অয়েল তেল টাইপ বি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারে আসতে পারে। তাই যদি আপনার ডায়াবেটিস থাকে তবে আপনার খাদ্য তালিকায় অলিভ অয়েল যুক্ত করতে পারেন।

চোখের উপকারে অলিভ অয়েল তেল

আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হচ্ছে চোখ। বর্তমানে ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেই চোখের সমস্যায় ভুগে থাকেন। চোখের নানা সমস্যায় ছোটবেলা থেকেই এখনকার মানুষ ভুগতে থাকে। বিশেষ করে সারাদিন টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ব্যবহারের ফলে আমাদের চোখে অনেক বাড়তি চাপ পড়তে থাকে। এভাবে এক সময় আমাদের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। এছাড়াও চোখে পানি পড়া, চোখ জ্বালাপোড়া করা সহ নানান জটিল রোগের দেখা দেয়। এ সমস্যা দূরীকরণে অলিভ অয়েল তেল আপনার জন্য অনেক উপকারে আসতে পারে। আপনি চাইলে প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আপনার চোখের চারপাশে অলিভ অয়েল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন। এতে করে আপনার চোখের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। যা কিনা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

কোলেস্টেরলের সমস্যায় অলিভ অয়েল তেল

আজকাল কমবেশি প্রায় সকলেই কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগে থাকেন। বাহ্যিকভাবে এটা একটি সাধারণ সমস্যা মনে হলেও একসময় এটি খুব গুরুতর অবস্থা ধারণ করতে পারে। অলিভ অয়েল তেলে প্রচুর পরিমাণ স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে যা কিনা শরীরের রক্তে কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া অলিভ অয়েল তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা কিনা শরীরে কোলেস্টেরল তৈরিতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত ভার্জিন অলিভ অয়েলে রয়েছে পলিফেনল যা কিনা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।

উপরে আমরা আপনাদের জন্য বেশ কিছু অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা তুলে ধরলাম। এগুলো ছাড়াও আরো নানান জটিল রোগের সমস্যার সমাধান হিসেবে অলিভ অয়েল তেল উপকারে আসে। অলিভ অয়েল তেল এতটাই উপকারে আসে এ নিয়ে এখনও গবেষণার কমতি নেই।

অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম

যুগ যুগ ধরে অলিভ অয়েল তেল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। রান্না, রূপচর্চা ও চিকিৎসা এই তিন কাজে মূলত বেশি অলিভ অয়েল তেলের ব্যবহার হয়ে থাকে। তেলটি কতটুকু জারিত হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে তেলতিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এক্সট্রা ভার্জিন, ভার্জিন, রিফাইন পিওর। বিশেষজ্ঞরা রান্না বা সালাদের ক্ষেত্রে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছে। জয়তুনের তেল একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার তেল। এশিয়া সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় জনপ্রিয় কিছু খাবার তৈরিতে এই তেল ব্যবহার করা হয়। শুধু ভাজা ছাড়াও বিভিন্ন সবজি কিংবা সালাদ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় অলিভ অয়েল তেল। তাছাড়া শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অলিভ অয়েল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা যায়। চাইলে আপনারা তেলটা কিছুটা গরম করে তারপর ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ভলিবল তেলের আরো নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে।

মুখে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম

যুগ যুগ ধরে রূপচর্চার জন্য আমরা আমাদের মুখে বিভিন্ন প্রকার তেল ব্যবহার করে থাকি। নারকেল তেল এবং আমন্ড তেল অনেকেই ব্যবহার করে থাকে। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না ত্বকের জন্য সবচেয়ে উপকারী তেল হচ্ছে অলিভ অয়েল তেল। প্রতিদিন আপনারা চাইলে ঘুমোনোর আগে মুখে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করতে পারেন। যা কিনা মুখের ত্বকের জন্য বেশি উপকারী। অলিভ অয়েলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কিনা মুখের তারুণ্য বজায় রাখতে বেশ উপকারে আসে। ফলে আপনি যদি অল্প বয়সে বার্ধক্য জনিত সমস্যায় ভুগেন অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের ফলে আপনার তারুণ্য আরো বেশ কিছু সময়ের জন্য আপনি ধরে রাখতে পারবেন। মুখের রূপচর্চার জন্য অনেকে আমরা ভুলভাল পণ্য ব্যবহার করে থাকি, অনেকেই আবার ভুলভাবে ডায়েট করে থাকি। যার ফলে মুখে বলিরেখা পড়তে দেখা যায়। অলিভ অয়েল তেলের ব্যবহার আপনার মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বলিরেখা দূর করে ত্বককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে।

অলিভ অয়েল তেলের দাম কত

আমরা যে সমস্ত তেল ব্যবহার করে থাকি তার মধ্যে অলিভ অয়েল তেলের দাম তুলনামূলক একটু বেশি। ভালো জিনিসের দাম একটু বেশি তো হবেই। রান্না, চিকিৎসা, রূপচর্চা সব কাজেই এই অলিভ অয়েল তেল অনেক উপকারে আসে। আপনি যদি খাবারে প্রতিদিন অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করতে চান তাহলে আপনাকে তার জন্য বেশ অনেকটা খরচ করতে হবে। তাই সচরাচর আমরা রান্নার কাজে সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকি। বিশেষ কোনো খাবার বানাতে আমরা অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করি। তাছাড়া রূপচর্চা ও চিকিৎসার কাজে তো এর ব্যবহার হচ্ছেই। খাবারের জন্য ব্যবহার করা অলিভ অয়েল তেল লিটার প্রতি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা হয়ে থাকে।

অলিভ অয়েলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অলিভ অয়েল তেলে যে খুব বেশি একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে এমনটা নয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের ফলে এলার্জির সমস্যা দেখা দেয়। আপনাদের যত ত্বক খুবই সংবেদনশীল এবং তৈলাক্ত তারা অবশ্যই অলিভ অয়েল তেল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ নিয়ে নিবেন। অলিভ অয়েলে রয়েছে অনেক উচ্চ চর্বিযুক্ত উপাদান যা ব্যবহারের ফলে আপনার খাদ্য হজমে সমস্যা হতে পারে। ফলে খুব সহজেই ডায়রিয়া হতে পারে। তবে এর সম্ভাবনা খুবই কম। তাই অতিরিক্ত অলিভ অয়েল ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নিবেন। এছাড়াও ব্রণের সমস্যা, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া এই সকল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের ফলে দেখা যায়।

ইতিকথা, কমবেশি প্রায় সব জিনিসেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অলিভ অয়েলে যে খুব বেশি একটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে এমনটা নয়। হাজারে একজনের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাও এমন কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয় যা আপনার জন্য খুবই ক্ষতিকর। পরিশেষে বলতে চাই অলিভ অয়েল তেল অত্যন্ত উপকারী একটি তেল। সঠিকভাবে এর ব্যবহার করলে দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে আপনারা ব্যাপক উপকার পাবেন। আপনাদের উপকারে আসবে এমন আরোও তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

১ লিটার অলিভ অয়েল তেলের দাম কত?

এক লিটার এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল তেল আপনারা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। ক্ষেত্র বিশেষ ব্র্যান্ড এর পণ্য হলে দাম হতে পারে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।

প্রতিদিন কতটুকু অলিভ অয়েল খাওয়া যায়?

বিশেষজ্ঞদের মতো একজন সুস্থ মানুষ প্রতিদিন এক থেকে দুই চামচ অলিভ অয়েল তেল খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারে আসে। তবে দিনে সর্বোচ্চ চার টেবিল চামচ অলিভ অয়েল তেল খাওয়া যেতে পারে। এর বেশি খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

Leave a Reply