ফ্রিল্যান্সিং কি এবং ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ঘরে বসেই খুব সহজে

ফ্রিল্যান্সিং কি

ফ্রিল্যান্সিং বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় একটি পেশা। বিশেষ করে তরুণ সমাজে ফ্রিল্যান্সিং করে জীবিকা নির্বাহ করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যার কারণে সকলেই বর্তমানে ফ্রিল্যান্সার হতে চায়। আপনারা যারা ফ্রিল্যান্সিং কি বিস্তারিত জানতে চান তারা এই আর্টিকেলটি পড়ে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাছাড়া কিভাবে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং শিখবেন, কোথায় কিভাবে শিখবেন, কোথায় কোর্স পাবেন, কোথায় কাজ করবেন এই সব কিছু নিয়ে আজকের আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

Tables of Contents

ফ্রিল্যান্সিং কি?

ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি মুক্ত পেশা যেখানে একজন ব্যক্তি তার সময়, জ্ঞান এবং দক্ষতা ব্যবহার করে অন্য লোকেদের জন্য কাজ করে এবং পরিষেবা প্রদান করে। এর জন্য ফ্রিল্যান্সাররা তাদের কাজের একটি মূল্য নির্ধারণ করেন এবং গ্রাহকদের তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা প্রদান করেন।

ফ্রিল্যান্সাররা কোন নির্দিষ্ট কোম্পানী বা ফার্মের জন্য কাজ করেন না। ফ্রিল্যান্সাররা নিজেরাই তাদের গ্রাহক খুঁজে নেয় এবং একজন গ্রাহকের কাজ শেষ হয়ে গেলে অন্য গ্রাহক খুঁজে নেয়। এর জন্য কোন কোম্পানী বা ফার্মের উপর নির্ভরশীল হতে হয় না। এই ধারাবাহিকতায় কাজ চলতে থাকে। তাই ফ্রিল্যান্সিং একটি দক্ষতা ভিত্তিক কাজ। এখানে আপনি আপনার দক্ষতার বিনিময়ে উপার্জন করবেন। এই দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে বিভিন্ন কাজ রয়েছে চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক।

ফ্রিল্যান্সিং কত প্রকার

ফ্রিল্যান্সিং এর কোন নির্দিষ্ট প্রকারভেদ নেই। ফ্রিল্যান্সিং একটি স্বাধীন পেশা। আপনি চাইলে ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। আপনি অনলাইনে সেবার বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করলে তা এক প্রকার ফ্রিল্যান্সিং বলা যেতে পারে। তাই ফ্রিল্যান্সিং এর কোন নির্দিষ্ট প্রকারভেদ নেই। তবে জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয় কিছু কাজ তুলে ধরা যেতে পারে। নিচে আপনাদের সামনে ফ্রিল্যান্সিং এর জনপ্রিয় কিছু কাজ তুলে ধরলাম।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ কি ?

ফ্রিল্যান্সিং এর অনেক কাজ রয়েছে। দিন দিন এই কাজের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেমনঃ গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, অ্যাপ ডেভেলপার, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, আর্টিকেল রাইটার, ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ভিডিও ইডিটর ইত্যাদি। এছাড়াও আরোও অনেক ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ রয়েছে। নিচে আপনারা ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সম্পর্কে আরোও বিস্তারিত জানতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ

ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা হওয়ায় এর বিভিন্ন কাজ রয়েছে। তবে সব কাজের জনপ্রিয়তা এক নয়। নতুন হিসেবে আপনি কোন কাজে নিজেকে দক্ষ করে তুলবেন তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন কোন কাজে নিজেকে দক্ষ করার পিছনে সময় নষ্ট করা উচিত নয় যার চাহিদা কমে যাছে বা একেবারে নেই বললেই চলে। তাই এখন আপনাদের সামনে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ থেকে জনপ্রিয় ১৫ টি ফ্রিল্যান্সিং কাজ বাছাই করে আলোচনা করবো। এই কাজ গুলোর অন্তত আগামী ২০ বছর ব্যাপক চাহিদা থাকবে।

বাছাইকৃত ১৫ টি সেরা ফ্রিল্যান্সিং কাজসমূহঃ

১. গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphic Design)
২. ভিডিও এডিটিং (Video Editing)
৩. ওয়েব ডিজাইন (Web Design)
৪. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Web Development)
৫. অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট (App Development)
৬. ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing)
৭. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization -SEO)
৮. কনটেন্ট রাইটিং (Content Writing)
৯. কপিরাইটিং (Copywriting)
১০. এনিমেশন (Animation)
১১. ডাটা এন্ট্রি (Data Entry)
১২. ট্রান্সক্রাইবিং (Transcribing)
১৩. ট্রান্সলেটিং (Translating)
১৪. ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট (Virtual Assistant)
১৫. অনলাইন শিক্ষকতা (Online Tutoring)

১. গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphic design)

ফ্রিল্যান্সারদের যতো রকম জনপ্রিইয় কাজ রয়েছে তার মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন অন্যতম জনপ্রিয় একটি কাজ। ফ্রিল্যান্সারদের বিরাট একটা অংশ গ্রাফিক্স ডিজাইন সেক্টরে কাজ করে থাকে। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হতে হলে আপনার মধ্যে সৃজনশীলতা থাকতে হবে। এই কারণে গ্রাফিক্স ডিজাইনকে সৃজনশীল কাজ বলা হয়। বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকদের জন্য আকর্ষণীয় ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট তৈরি করাই গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ।

গ্রাফিক্স ডিজাইনেও অনেক ভাগ রয়েছে। যেমনঃ লগো ডিজাইন, পোস্টার ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, টি-শার্ট ডিজাইন, ফন্ট ডিজাইন, বুক ডিজাইন, ইনফোগ্রাফিক ডিজাইন, প্যাটার্ন ডিজাইন, বিজনেস কার্ড ডিজাইন ইত্যাদি। আপনি যেই ডিজাইন নিয়েই কাজ করুন না কেনো আপনাকে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর এবং অ্যাডোবি ফটোশপ সফটওয়্যার এর ব্যবহার ভালো করে আয়ত্ত করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরোও বেশ কিছু সফটওয়্যার এর ব্যবহার ও শিখতে হতে পারে।

ফ্রিল্যান্সার মার্কেটে গ্রাফিক্স ডিজাইনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মাসে ৫০ হাজার থেকে ৫ লক্ষ টাকা রোজগার করা সম্ভব গ্রাফিক্স ডিজাইনে। তবে ফ্রিল্যান্সার মার্কেটে এর ব্যাপক প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাই সৃজনশীলতা না থাকলে এই সেক্টরে না আশাই উত্তম। আজ কাল প্রায় সবাই টুকটাক গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে পারে। কিন্তু মার্কেটপ্লেসে টিকে থাকতে হলে আপনাকে সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে হবে।

২. ভিডিও এডিটিং (Video Editing)

দিন দিন ভিডিও এডিটিং এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ভিডিও এডিটরদের চাহিদা অনেক। ইউটিউব ভিডিও তৈরি করার জন্য প্রচুর গ্রাহক ভিডিও এডিটর খুঁজে বেড়ান। তাছাড়া কোম্পানি তাদের প্রচার প্রচারণার জন্য ভিডিও মার্কেটিং করে থাকে, যার জন্য ব্যাপক ভাবে ভিডিও এডিটরদের চাহিদা বেড়েই চলেছে। ভিডিও এডিটিং শিখে আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি নিজের ইউটিউব চ্যানেলেও কাজ করতে পারেন।

ভিডিও এডিটিং করার জন্য অনেক সফটওয়্যার রয়েছে। যেমনঃ অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রো, অ্যাডোবি অ্যাডোবি আফটার এফেক্টস, ফিল্মোরা, ক্যামটাসিয়া ইত্যাদি। এর মধ্যে অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রো অন্যতম। প্রায় সব কাজই এর মাধ্যমে করা যায়।

তবে মোশন গ্রাফিক্স এনিমেশন নিয়ে কাজ করতে চাইলে আপনাকে অ্যাডোবি আফটার এফেক্টস শিখতে হবে।অ্যাডোবি আফটার এফেক্টস এর চাহিদা অনেক, কিন্তু তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় সবাই শিখতে চায় না। তাছাড়া এর জন্য ভালো মানের কম্পিউটার থাকা বাধ্যতামূলক। অ্যাডোবি আফটার এফেক্টস এর মার্কেটে চাহিদা যেমন অনেক ঠিক তেমন ভাবে ইনকামও বেশি।

৩. ওয়েব ডিজাইন (Web Design)

ওয়েব ডিজাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটের অন্যতম জনপ্রিয় এবং চাহিদাসম্পন্ন কাজ। প্রতিদিন ওয়েবসাইট তৈরির চাহিদা বেড়েই চলেছে। প্রত্যেক কোম্পানিরই প্রায় নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে। সবাই চায় তাদের ওয়েবসাইটটি দৃষ্টিনন্দন ভাবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে। তার জন্য প্রয়োজন হয় ওয়েব ডিজাইনারের।

ওয়েব সাইটের রং,গ্রেডিয়েন্ট কেমন হবে, কোথায় মেনুবার হবে, লে-আউট কেমন হবে, বাটন কেমন হবে যাবতীয় সব কিছু ডিজাইন সংক্রান্ত কাজ ওয়েব ডীজাইনাররা করে থাকে। যদিও বর্তমানে শুধু ওয়েব ডিজাইন শিখে মার্কেটে টিকে থাকা কঠিন। কারণ ওয়েব ডেভলোপাররাই এখন ডেভলপমেন্ট এর পাশাপাশি ডিজাইন ও করে থাকেন।

শুধু ওয়েব ডিজাইন শিখে কাজ পাওয়া যাবে না এমন নয়। শুধু ডিজাইন শিখেও আপনি আয় করতে পারবেন। তবে একজন ওয়েব ডেভলোপার হওইয়াই শ্রেয়, পাশাপাশি ডিজাইন শিখলে কাজের অভাব হবে না। ওয়েব ডিজাইন এর জন্য আপনারা সিএসএস(CSS) শিখতে পারেন শুরুতে। এরপর ফ্রেমওয়ার্ক হিসেবে Tailwind CSS সহ আরোও অনেক কিছু শিখতে পারেন।পাশাপাশি ফিগমা, অ্যাডোবি এক্সডি শিখতে পারেন।

৪. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট (Web Development)

উপরে আগেই বলেছিলাম দিন দিন বর্তমানে ওয়েবসাইট তৈরির চাহিদা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে ই-কমার্স সাইট, সংবাদপত্র ওয়েবসাইট, ব্লগিং ওয়েবসাইট, ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট, কোম্পানির নিজস্ব ওয়েবসাইট ইত্যাদি তৈরির জন্য দক্ষ ওয়েব ডেভলপার এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধু বাংলাদেশী নয় বাইরের দেশেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। শুধুমাত্র ওয়েবসাইট তৈরি করেই শেষ নয় ওয়েবসাইট মেন্টেন করার জন্য দক্ষ ওয়েব ডেভলভার এর প্রয়োজন হয়।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট দুটি পার্ট রয়েছে। যথাঃ ফ্রন্ট এন্ড এবং ব্যাক এন্ড। ফ্রন্ট এন্ড মূলত ওয়েব ডিজাইনেরই একটি অংশ।ফ্রন্ট এন্ডের মধ্যে আপনার ওয়েবসাইটের লেআউট এবং তার ডিজাইন কেমন হবে এই সব কিছু তৈরি করতে হয়। আপনার ওয়েবসাইটটিকে ডায়নামিক করতে প্রয়োজন ব্যাক এন্ড।

ফ্রন্ট এন্ডের কাজ করতে হলে আপনাকে শিখতে হবে এইচ.টি.এম.এল সি.এস.এস এবং জাভাস্ক্রিপ্ট।জাভাস্ক্রিপ্ট শুধু ফ্রন্ট এন্ড এর কাজে লাগে এমন নয়, বর্তমানে যাবে স্ক্রিপ্ট দিয়ে ব্যাক এন্ড ও তৈরি করা যায়।এছাড়া ফ্রন্ট এন্ডের জন্য আপনারা রিয়েক্ট সহ আরো অনেক ফ্রেমওয়ার্ক শিখতে পারেন।ব্যান্ডের জন্য আপনারা তুমুল জনপ্রিয় নোড জেএস, পিএইচপি, পাইথন শিখতে পারেন।ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মূলত অনেক কিছুই শেখার রয়েছে।তাছাড়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।কিন্তু একবার ফুলস্টাক ডেভলপার হয়ে গেলে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

৫. অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট (App Development)

যদি বর্তমানে বলা হয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কোন কাজের চাহিদা বেড়েই চলেছে এবং সামনেও বাড়বে তাহলে সবার আগে যার নাম আসবে তা হচ্ছে অ্যাপ ডেভলপমেন্ট। প্রতিটি কোম্পানি চাই তাদের নিজস্ব যেন একটি অ্যাপ থাকে। বর্তমানে প্রতিটি ওয়েবসাইটে একটি করে নিজস্ব অ্যাপ দেখা যায়। বিশেষ করে ই-কমার্স অ্যাপ এর চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে।

অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ওয়েব ডেভেলপমেন্ট থেকে তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় এই সেক্টরে সবাই আসতে চায় না। তাছাড়া ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর জন্য লো এন্ড পিসি হলেই চলে, কিন্তু অ্যাপ ডেভলপমেন্ট এর জন্য তুলনামূলক হাই এন্ড পিসি প্রয়োজন। তাছাড়া অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করার কাজ তুলনামূলকভাবে জটিল হওয়ায় সবাই অ্যাপ ডেভলপার হতে চায় না।কিন্তু কথায় আছে যেখানে কষ্ট বেশি সেখানে অর্থ বেশি। অ্যাপ ডেভলপমেন্ট শিখতে পারলে আপনি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি ইনকাম করতে পারবেন।

বর্তমানে দুই রকমের অ্যাপ দেখা যায়। নেটিভ অ্যাপ এবং হাইব্রিড অ্যাপ। হাইব্রিড অ্যাপের জন্য আপনাকে অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এর জন্য আলাদা ভাবে অ্যাপ তৈরি করতে হবে। জাভা, কটলিন দিয়ে আপনারা অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য হাইব্রিড অ্যাপ তৈরি করতে পারেন। আইওএসের জন্য অ্যাপ তৈরি করতে আপনাদেরকে শিখতে হবে সুইফট।

হাইব্রিড অ্যাপে অন্য কোন সমস্যা নেই। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এর জন্য আলাদা ডেভলপার নিয়োগ দিতে হয়। এতে করে প্রোডাকশন খরচ বেড়ে যায়। প্রতিটি কোম্পানি চায় তাদের কিছুটা টাকা বাঁচাতে। তার সমাধান হিসেবে বর্তমানে মার্কেটে এসেছেন নেটিভ অ্যাপ।

নেটিভ অ্যাপ দিয়ে আপনি একটি সোর্স কোড দিয়েই অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস এর জন্য অ্যাপ তৈরি করতে পারবেন। অর্থাৎ অ্যান্ড্রয়েড এর জন্য অ্যাপ তৈরি করলেই আপনার সেই অ্যাপ আইওএসে চলবে। এর জন্য আপনারা রিয়েক্ট নেটিভ শিখতে পারেন অথবা চাইলে ফ্লাটার ও শিখতে পারেন।

৬. ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing)

যুগ বদলে গেছে। বর্তমানে প্রায় সবকিছুতেই অনলাইন ভিত্তিক কাজ হয়ে থাকে। ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে আরও সহজ এবং উন্নত করেছে। এর ফলে আমরা শুধুমাত্র একটি ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেই অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে থাকি।

আজকাল অনলাইন শপিং, টিকিট বুকিং, রিচার্জ, বিল পেমেন্ট, অর্থ লেনদেন ইত্যাদি সকল কাজই ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেটের প্রতি এই প্রবণতা থেকে আজকাল সকল ব্যবসা কিংবা কোম্পানি ডিজিটাল মার্কেটিং করে থাকে। আমরা যদি দেখি কোন ক্রেতা কোন পণ্য কিনতে চায় তাহলে ৪০% মানুষ আগে সেই পণ্য কিনার আগে অনলাইনে গবেষণা করে। এমন পরিস্থিতিতে কোন ব্যবসা কিংবা কোম্পানির জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

এত বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ডিজিটাল মার্কেটিং শিখা তুলনামূলক সহজ। আপনি যদি ভাল ইংরেজি পারেন তাহলে আপনার জন্য তা আরও অনেক বেশি বাড়তি সুবিধা দিবে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে যতগুলো কাজ রয়েছে তার মধ্যে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং অন্যতম জনপ্রিয় একটি কাজ। কনটেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, সিপিএ মার্কেটিং শিখে চাইলে এখনি আপনারা একজন ডিজিটাল মার্কেটের হয়ে উঠতে পারেন। এগুলো ছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং আরো অনেক ধাপ রয়েছে।

৭. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization -SEO)

ওয়েবসাইট তো তৈরি করলেন কিন্তু সেই ওয়েবসাইট যদি সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাংকই না করে তাহলে সেই ওয়েবসাইটটি আপনার খুব বেশি একটা লাভ হবে না। মনে রাখবেন যে টপিক নিয়ে আপনি কাজ করছেন সেই ট্রফিকে আরও অনেক কিওয়ার্ড সার্চ ইঞ্জিনের র‍্যাংক করে আছে। তাদের ওয়েবসাইট ছেড়ে সার্চ ইঞ্জিন কেন আপনার ওয়েবসাইট র‍্যাংক করবে?

এক্ষেত্রে তখন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগে সার্জ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন মূলত দুই প্রকার।অন পেইজ এবং অফ পেইজ। টপিক রিসার্চ, কিওয়ার্ড রিসার্চ, ব্যাক লিংক ইত্যাদি এই সবকিছু অন পেজ এস.ই.ও এর অংশ। অফ পেজ এস.ই.ও তে মূলত পেজের টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শিখে আপনি দীর্ঘমেয়াদি কাজ পেতে পারেন। প্রতিটি ওয়েবসাইটের জন্যই সার্চ ইঞ্জিন অটোমাইজেশন করা হয়।তাই বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ লাভবান কাজ।

৮. কনটেন্ট রাইটিং (Content Writing)

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটিং এর যতগুলো কাজ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম সহজ একটি কাজ হচ্ছে কন্টেন্ট রাইটিং। তবে এর জন্য আপনার সৃজনশীলতা থাকতে হবে। কোন বিষয়বস্তুর উপর বিস্তারিত ভালোভাবে লিখতে জানতে হবে। তবে যদি ইংরেজি জানা না থাকে তাহলে কনটেন্ট রাইটিং করে খুব বেশি একটা এগিয়ে যেতে পারবেন না।

কনটেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কিভাবে সহজ ভাষায় আকর্ষণীয় উপায়ে আপনি কোন বিষয়বস্তুকে কারো সামনে তুলে ধরতে পারছেন। তাছাড়া কনটেন্ট লিখার সময় আপনার মাথায় রাখতে হবে মানুষ কোন বিষয় বস্তুর উপর সবচেয়ে বেশি সার্চ করে, কোন বিষয় মানুষ জানতে চায়। কিওয়ার্ড এবং এস.ই.ও কনটেন্ট রাইটিং এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ, ই কমার্স পণ্যের রিভিউ, কপি রাইটিং ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার কনটেন্ট রাইটিং রয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ভালো ইংরেজি জানতে হবে।

৯. কপিরাইটিং (Copywriting)

ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অবিচ্ছাদ্য অংশ হচ্ছে কপিরাইটিং। বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন কিংবা মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে অনেক আকর্ষণীয় এবং চমকপ্রদ লেখা লিখতে হয়। এর মাধ্যমে ক্রেতাকে আকর্ষণ করে পণ্য কিনতে বাধ্য করা হয়। এইসব লেখাই কপিরাইটিং এর অন্তর্ভুক্ত।

একজন কপিরাইটের অনেক রকম কাজ করে থাকেন। যেমনঃ বিজ্ঞাপনের স্ক্রিপ্ট লেখা, প্রেস বিজ্ঞপ্তি লেখা, ইমেইল ক্যাম্পেইনের জন্য ইমেইল লেখা, স্লোগান ও ট্যাগলাইন লেখা ইত্যাদি। একজন সফল কপি রাইটার হতে হলে আপনাকে এইসব বিষয়ের উপর ভালো লেখার দক্ষতা থাকতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং কপিরাইটিং করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভালো সৃজনশীল মনোভাব তৈরি করতে হবে। যে ভাষায় লিখবেন সেই ভাষার উপর যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। মার্কেটে কোন জিনিসের চাহিদা বেশি গ্রাহক কি চায় এই সব কিছু নিয়ে বিস্তারিত ভালো জ্ঞান চর্চা করতে হবে। কিভাবে সহজ ভাবে আকর্ষণীয়ভাবে একটি লেখা আপনি গ্রাহকের কাছে তুলে ধরবেন তাই একজন সফল কপিরাইটার কাজ।

১০. এনিমেশন (Animation)

বর্তমান যুগে বেশিরভাগ মানুষ ভিডিও দেখতে খুবই পছন্দ করে। এনিমেশন ভিডিওর চাহিদা বরাবরই আকাশচুম্বী। বর্তমানে কোম্পানি তাদের ব্যবসার প্রচার প্রচারণা করার জন্য এনিমেশনের সাহায্য নেয়। কারণ এনিমেশন এর মাধ্যমে পণ্যের বিজ্ঞাপন বা যে কোন কিছু খুব সহজে ফুটিয়ে তোলা যায়। অ্যানিমেশনের মাধ্যমে গ্রাহক আকর্ষণ করা খুবই সহজ।

প্রতিটি কোম্পানিরই বর্তমানে অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরির জন্য এনিমেটর এর দরকার হয়। ফ্রিল্যান্সিং এর যে সমস্ত কাজ করে অনেক বেশি উপার্জন করা যায় তার মধ্যে এনিমেশন অন্যতম। তবে সবাই এই সেক্টরে আসতে চায় না। কারণ এনিমেশন শিখা একটি সময় সাপেক্ষ এবং পরিশ্রমের ব্যাপার। এর জন্য অনেক উন্নত ভালো মানের কম্পিউটারের প্রয়োজন হয়।

তবে আপনি যদি একবার এনিমেশন শিখতে পারেন তাহলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর পাশাপাশি নিজেই ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও তৈরি করে বাড়তি রোজগার করতে পারবেন। মূলত দুই রকমের এনিমেশন ভিডিও বেশি দেখা যায়। টুডী এনিমেশন এবং থ্রিডি এনিমেশন। টুডি এনিমেশন এর জন্য আপনারা অ্যাডোবি অ্যানিমেট সিসি,অ্যাডোবি আফটার এফেক্টস, টুন বুম হার্মনি, মহো শিখতে পারেন। থ্রিডী এনিমেশনের জন্য ব্লেন্ডার,মায়া শিখতে পারেন।

১১. ডাটা এন্ট্রি (Data Entry)

ফ্রিল্যান্সিং এ যতগুলো কাজ রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে ডাটা এন্ট্রি। অনান্য কাজের তুলনায় শিখাও অনেক সহজ। শিখতে সময়ও কম লাগে। বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তথ্য গুছিয়ে ডাটা আকারে উপস্থাপন করাকেই ডাটা এন্ট্রি বলে। দিন দিন কোম্পানী, শিল্প কারখানা বৃদ্ধির সাথে ডাটা এন্ট্রির চাহিদাও বাড়ছে।

অনেকেই ডাটা এন্ট্রির কাজ করে ভালো আয় করছেন। ডাটা এন্ট্রির জন্য, সাধারণত MS Office, MS Excel, MS Powerpoint, Tally Accounting বা অন্য কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় ডেটা সংরক্ষণ এর জন্য । মনে রাখবেন ডাটা এন্ট্রির কাজকে পার্ট টাইম কাজ হিসেবে গণ্য করবেন। শুধু এর উপর নির্ভর করে বসে থাকা যাবে না।

ডাটা এন্ট্রি কত প্রকার? এর কোন সঠিক প্রকারভেদ নেই। অনেক রকম ডাটা এন্ট্রির কাজ দেখা যায়। যেমনঃ কপি পেস্ট, ক্যাপশনিং, ফর্ম পূরণ, অনলাইন জরিপ কাজ, ক্যাপচা এন্ট্রি কাজ, মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশনবিদ, ইমেল প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি। যদি অবসর সময়ে কিছু আয় করতে চান ডাটা এন্ট্রি শিখা একটি ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।

১২. ট্রান্সক্রাইবিং (Transcribing)

বিভিন্ন অডিও বা ভিডীও থেকে কথাগুলো শুনে সেই কথাগুলো লেখায় রূপান্তর করাকে ট্রান্সক্রাইবিং বলে। আজকাল অনেকেই ভিডিওর নিচে সাবটাইটেল দিয়ে থাকে। এর জন্য প্রয়োজন হইয় ট্রান্সক্রাইবিং এর। তাছাড়া অনেকেই এই লেখা আর্টিকেল আকারেও শেয়ার করে থাকে।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট গুলোতে ট্রান্সক্রাইবিং এর চাহিদা বাড়ছে। ফাইভার, আপওয়ার্ক সব জায়গাতেই আপনারা ট্রান্সক্রাইবিং এর কাজ দেখতে পাবেন। ট্রান্সক্রাইবিং এর কাজ করতে হলে আপনি যে ভাষায় ট্রান্সক্রাইবিং করবেন, সেই ভাষার উপর যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে।

১৩. ট্রান্সলেটিং (Translating)

কোন কিছুকে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করাকে ট্রান্সলেশন বলে। ট্রান্সলেশন অর্থ অনুবাদ করা। যেকোন গান, চিরকুট, আর্টিকেল, কবিতা, উপন্যাস এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করে রূপান্তর করাই ট্রান্সলেটিং এর কাজ।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে ট্রান্সলেটিং এর বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ট্রান্সলেটিং করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ভাষার উপর পরিপূর্ণ জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকতে হবে। ধরুণ আপনি যদি ভালো বাংলা এবং ইংরেজি জানেন তাহলে আপনি বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ অথবা ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করে ট্রান্সলেটিং এর কাজ শুরু করতে পারেন।

বর্তমানে ইংরেজী, চাইনিজ, স্প্যানিশ, এরাবিক, ফ্রেঞ্চ, জাপানিজ ট্রানলেটিং কাজের চাহিদা বেশি। তাই এই ভাষা গুলো আপনি ভালো ভাবে জেনে থাকলে দেরি না করে এখনি শুরু করে দিন ট্রান্সলেটিং এর কাজ। বেশ ভালো উপার্জন করা যায় ট্রান্সলেটিং এর কাজ করে।

১৪. ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট (Virtual Assistant)

ফ্রিল্যান্সারদের কাজে নতুন সংযোজন ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট। সহজ ভাষাইয় দূরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে কোন কাজে সহকারী হিসেবে কাজ করাই হচ্ছে ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট। এর জন্য ক্লায়েন্টের অফিসে যেতে হয় না। সব কাজ ঘরে বসেই করা যায়।
খুব বেশি দিন হয় নি ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট ফ্রিল্যান্সারদের কাজ হিসেবে মার্কেটে এসেছে। অনেকে এখনোও জানেই না ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট কি ! কিন্তু দিন দিন ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।

যেকোন কোম্পানি বা ব্যবসার জন্য অনেক লোক প্রয়োজন হয়। সব কাজের জন্য কর্মি নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেই ক্ষেত্রে কোম্পানি বা ব্যবসার জন্য ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয়া হয়। ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে। সেই সাথে সততা থাকাও ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট হওয়্যার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১৫. অনলাইন শিক্ষকতা

যারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের কারণে শিক্ষকতা পেশা গ্রহণ করতে পারেন না তাদের জন্য অনলাইন শিক্ষকতা হতে পারে অন্যতম সেরা বিকল্প। তাছাড়া আপনার শিক্ষকতা ক্যারিয়ারের পাশাপাশি অবসর সময়ে আপনি যদি বাড়তি কিছু উপার্জন করতে চান তাহলে অনলাইন শিক্ষকতা হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম ফ্রিল্যান্সিং মাধ্যম। অনলাইনে যেকোন টপিকে আপনারা চাইলে শিক্ষকতা করতে পারেন। সাধারণত জুম, গুগল মিটের মাধ্যমে অনলাইনে কোর্স আকারে শিক্ষকতা করা হয়।

ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল ?

ঘরে বসে অনলাইনেই ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী দেশ বিদেশে কাজ করাই হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল? এমন চিন্তা অনেকের মনেই এসে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং হালাল নাকি হারাম তা নির্ভর করে আপনার কাজের উপর।

আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং এ এমন কাজ করেন যাতে হারামের স্পর্শ নেই তাহলে তা শরিয়ত অনুযায়ী হালাল। হারাম যেকোন কিছু এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকলে তা হারাম বলে গণ্য হবে। তাই কাজ করার আগে হারাম নাকি হালাল ভেবে কাজ করতে হবে।

ধরুণ আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপার। আপনার কাছে দুইজন ক্লায়েন্টের কাজ আসলো। একজন আপনাকে বলছে একটি সংবাদপত্র ওয়েবসাইট তৈরি করে দিতে, আরেকজন বলছে আপনাকে ট্রেডিং ওয়েব সাইট তৈরি করে দিতে। আপনারা জানেন ইসলামে ট্রেডিং হারাম। তাই সংবাদপত্র ওয়েবসাইট তৈরির কাজ হালাল হলেও ট্রেডিং ওয়েবসাইট তৈরি হারাম।

নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং

নতুন যারা ফ্রিল্যান্সিং করবেন ভাবছেন তাদের জন্য প্রথম বাঁধা থাকে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায়। নতুদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার প্রথম ধাপ কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান থাকা। কম্পিউটার না জানলে আপনি কখনোই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন না। অনেকেই নিজেদের কোর্স বিক্রির জন্য মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এর কথা বলে থাকে। বাস্তবে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং সম্ভব না। যদিও মোবাইল দিয়ে কিছু ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করা যায়। তবে তা বিরক্তিকর এবং সময়সাপেক্ষ।

নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কম্পিউটারের সাথে ইন্টারনেটের ব্যবহার জানাও জরুরী। কারণ ইন্টারনেট ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং অসম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট গুলোতে কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজীতে যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। অন্তত অন্যের সাথে যোগাযোগ করার মতো ইংরেজি জানতে হবে।

নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এর পরবর্তী ধাপে আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং এর যেকোন একটি ক্যাটাগরি বা কাজ পছন্দ করতে হবে। সেই কাজ ভালো ভাবে শিখে আয়ত্ত করতে হবে। তারপর ফ্রিল্যান্সিং মার্কেট যেমনঃ ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদি ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলে গিগ তৈরি করতে হবে। সেই গিগ সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করতে হবে। সবশেষে কাজ করে প্রাপ্ত অর্থ পেপাল, পেওনার বা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজের চাহিদা নির্ভর করে ট্রেন্ড এবং চাহিদার উপর। নির্দিষ্ট ভাবে শুধু একটি কাজের কথা বলা সম্ভব না। তবে আপনারা যারা ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি জানতে চান তাদের জন্য ১০ টি জনপ্রিয় চাহিদাসম্পন্ন কাজ তুলে ধরলামঃ

অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট,গ্রাফিক্স ডিজাইন ,এনিমেশন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, কনটেন্ট রাইটিং, কপিরাইটিং। এসব ছাড়াও আরো অনেক চাহিদা সম্পন্ন কাজ রইয়েছে। ভালো ভাবে কাজ জানলে সব কাজই চাহিদাসম্পন্ন।

ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি ?

বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ। দিন দিন এই ইন্টারনেট জালের মতো সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরোও বাড়বে। যার কারণে ফ্রিল্যান্সিং এর রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যত। আপনি যেই দেশেই থাকুননা কেনো সেই দেশে যদি অর্থনৈতিক মন্দা চলে কিংবা চাকরি না থাকে, আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে তারপরও আয় করতে পারবেন।

তাছাড়া বর্তমানে কোম্পানি গুলো সব কাজের জন্য কর্মি নিয়োগ দিতে চায় না। অনলাইনেই ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। এরে যেমন সাশ্রয় হয়, ঠিক তেমন ভাবে যোগ্য লোকের হাতে কাজ করিয়ে নেয়া যায়। তাই অদূর ভবিষ্যতে ফ্রিল্যান্সিং যথেষ্ট সম্ভাবনাময়ী। আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিং করে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ?

২০২৪ সালে এসেও যদি আপনি ভাবেন আপনি মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখে হাজার হাজার ডলার ইনকাম করবেন তাহলে আপনি এখনও ভুল ধারণা নিয়ে বসবাস করছেন। মোবাইল দিয়ে আপনি আর্টিকেল লিখার মতো টুকটাক কাজ করতে পারলেও কখনোই তেমন ভালো কিছু করতে পারবেন না। আপনার কম্পিউটার না থাকলে আপনি মোবাইল দিয়ে ব্যাসিক কাজ শুরু করতে বা শিখতে পারেন কিন্তু দিন শেষে মার্কেটে টিকে থাকতে হলে কম্পিউটারের বিকল্প নেই।

অনেকেই নিজেদের কোর্স বিক্রির জন্য মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যানিং শিখে মাসে হাজার ডলার আয় এর মতো চমকপ্রদ বিজ্ঞাপণ দেয়। বিশ্বাস করুন এসব কোর্স কিনে শুধু আপনারা সময় এবং অর্থ অপচয় হবে । তাই যদি ভালো কিছু করতে হয় একটু কষ্ট করে হলেও একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ কিনে নিন।

ইতিকথা, ঘরে বসে খুব সহজেই বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং শিখা যায়। আপনারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স কিনতে পারেন। চাইলে ইউটিউব দেখে ফ্রিতেও শিখতে পারেন। কোর্স কিনেই শিখতে হবে এমন কোন কথা নেই। তবে কেউ সরাসরি গাইডলাইন দিলে কাজ দ্রুত শিখা যায়। এই আর্টিকেলটিতে আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের সামনে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং এ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে। আশা করছি আপনারা উপকৃত হবেন। ফ্রিল্যান্সিং সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

ফ্রিল্যান্সিং এর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান কত?

ফ্রিল্যান্সিং এর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচুর ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং খাতে আয়ের পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।

ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা পাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম কোনটি?

ফ্রিল্যান্সিং এ টাকা পাওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম পেওনার।

ফ্রিল্যান্সিং এর সবচেয়ে সহজ কাজ কোনটি?

ফ্রিল্যান্সিং এর যতগুলো সহজ কাজ রয়েছে তার মধ্যে ডাটা এন্ট্রি অন্যতম।

Leave a Reply