বাংলাদেশ থেকে মাল্টা যাওয়ার উপায় – মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা!

মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা

বাংলাদেশ থেকে মালটা যাওয়ার উপায়? এ বছর মালটা যেতে কত টাকা খরচ লাগবে ও মাল্টা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কিভাবে কোথায় আবেদন করতে হবে এবং বাংলাদেশে মালটা যাওয়ার এম্বাসি কবে খুলবে তা নিয়ে আমরা আজকের পোস্টে আলোচনা করব।

ইউরোপের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে মালটা একটি উন্নত দেশ। বর্তমানে মাল্টায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় প্রচুর পরিমাণে লোক যাচ্ছেন বাংলাদেশ থেকে। কম টাকায় মালটা যাওয়ার সুযোগ থাকায় ইউরোপের মধ্যে মালটা যাওয়া লাভজনক। মালটা ইউরোপের বাকি দেশগুলোর মত উন্নয়নশীল এবং সেনজেনভুক্ত রাষ্ট্রের তালিকায় রয়েছে।

আপনি যদি ইউরোপে যেতে চান তাহলে ইউরোপের দেশের তুলনায় মালটা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে আমাদের আজকের পোষ্টটি আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে। এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি মালটা যাওয়ার প্রসেস এবং আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা যথাযথ চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ থেকে মালটা যেতে মোট কত টাকা খরচ হতে পারে?

বাংলাদেশ থেকে মালটা যাওয়ার জন্য সরকারি ও বেসরকারি এই দুটি উপায়ে আবেদন করতে হবে। বর্তমানে মালটায় প্রচুর পরিমাণে শ্রমিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি রয়েছে তাই সরকারিভাবে মালটা যাওয়ার সুযোগ আছে। আপনি যদি সরকারিভাবে মালটা যেতে চান তাহলে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ লাগতে পারে। এছাড়া ডিমান্ড অনুযায়ী এর থেকে কিছু কম বেশি লাগতে পারে।

তাছাড়া আপনি যদি বেসরকারিভাবে মালটা যেতে চান তাহলে আপনাকে বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করে মালটা যেতে হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি এজেন্সি গুলো আপনার থেকে সাত থেকে আট লক্ষ টাকার বেশি চার্জ করবে। ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ সকল এজেন্সির অফিস রয়েছে। তবে বেসরকারি এজেন্সির মাধ্যমে যেতে চাইলে একটু জেনে শুনে যাওয়াটাই উত্তম।

তবে আপনার যদি জানাশুনা না থাকে তাহলে সরকারিভাবে যাওয়াটাই উত্তম। কারণ বেসরকারিভাবে যাওয়ার মাধ্যমে অনেক এজেন্সি আপনাকে দিনের পর দিন ঘুরিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক এজেন্সি আপনাকে কম খরচে অর্থাৎ তিন থেকে চার লক্ষ টাকার মধ্যে বা সরকারি খরচের সমমান সংখ্যা নিয়ে আপনাকে প্রতারণা করার চেষ্টা করতে পারি। বেসরকারি এজেন্সি গুলোর একেকটার এক এক্রেট হয়ে থাকে। তাই সরকারিভাবে সঠিক খোঁজখবর নিয়ে আপনি আপনার ইউরোপ যাওয়ার পরিকল্পনা সফল করুন।

বাংলাদেশ থেকে মালটা যাওয়ার উপায়?

প্রথমত বাংলাদেশ থেকে আপনি ইউরোপের উন্নয়নশীল কান্ট্রি মালটাই যদি যেতে চান তাহলে আপনি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার আবেদন করার মাধ্যমে কাজ করার জন্য মালটা যেতে পারবেন। এজন্য আপনাকে বাংলাদেশ থেকে আবেদন করে তারপর ভারতের দিল্লিতে অবস্থানরত মালটার এম্বাসি ফেস করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে মালটার কোন এম্বাসি খোলা হয়নি।

আপনি ভারতে পৌঁছে মালটা যাওয়ার জন্য মালটার এম্বাসি ফেস করার পর সেখানে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তারপর এক থেকে তিন মাসের মধ্যে আপনার ভিসাটি অনুমোদন দেয়া হবে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসা তৈরি হলে ও অনুমোদন পেলে আপনি টিকেট কেটে মাল্টার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারবেন।

তাছাড়াও মালটা যাওয়ার জন্য VFS.Global অনুমোদিত কাগজপত্র ও স্বাক্ষর লাগবে যেটি আপনি VFS.Global ফরম পিডিএফ আকারে পেয়ে যাবেন।
আসলে ভিসা ছাড়া বর্তমানে মালটা যাওয়া প্রায় অসম্ভব কাজ। কারণ ইউরোপের বেশিরভাগ কান্ট্রি বা ইউরোপীয় কান্ট্রিতে যেতে হলে আমি ভিসার প্রয়োজন পরে আবার সব দেশে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দিয়েও যাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আপনার ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে যদি আপনি বেসরকারিভাবে ইউরোপে যাওয়ার বা মালটা যাওয়ার চিন্তা করে থাকেন।

হোটেল বয় কাজের ভিসায় সিঙ্গাপুরে খরচ ও বেতন কত?চলতি বছরের সিঙ্গাপুরে কাজের চাহিদা -২০২৩ সাল
রোমানিয়ায় ভিসা আবেদন করার পদ্ধতি -ভিসা কিভাবে আবেদন করব

বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে মালটা যাওয়া

এখন বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ইউরোপের কান্ট্রি মালটা তে যাওয়ার জন্য এম্বাসি খোলা হয়েছে। সরকারিভাবে মালটা তে লোক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চলছে তাই আপনি চাইলে বাংলাদেশ থেকে মালটা যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে সরকারি খরচে আপনার মাল্টা যেতে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ হবে আর বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে সরাসরি মালটায় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার কিছু দিনের মধ্যে আপনাকেও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দেওয়া হবে এবং তারপর এম্বাসি ফেস করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বর্তমানে মালটায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় প্রচুর জনবল নিয়োগ দিচ্ছে যে কারণে আপনি চাইলে সহজেই ইউরোপের কান্ট্রি মালটাতে যেতে পারবেন। আগে এত কম খরচে ইউরোপ কান্ট্রিতে যাওয়াটা স্বপ্নের ব্যাপার হলেও বর্তমানে মাল্টায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কারণে ওয়ার্ড পারমিট ভিসায় বাংলাদেশীদের জন্য একটি বড় সুযোগ রয়েছে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় মালটা যেতে আপনার যে সব করণীয় তা হলো-

পাসপোর্ট এর সর্বনিম্ন মেয়াদ ৬ মাস থাকতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্র ও সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে রঙিন ছবি তোলা এবং তা অবশ্যই ল্যাব প্রিন্ট হতে হবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট বিগত ৬ মাসের লেনদেনকৃত, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, রেজিস্ট্রেশন এবং মেডিকেল রিপোর্ট।

ওয়ার্ক পারমিট বিষয়ে মালটা যেতে হলে আপনি সরকারিভাবে বা বেসরকারিভাবে যেভাবেই যান না কেন অবশ্যই আপনার কোম্পানির জব অফার লেটার থাকতে হবে। আর অবশ্যই আপনি যে কোম্পানিতে জব করবেন সেই কোম্পানির প্রমাণস্বরূপ সাইন করা ডকুমেন্ট শো করতে হবে। যাতে করে আপনি এম্বাসি কি বুঝাতে পারেন যে আপনি কাজ পেয়ে তারপর মালটা যাচ্ছেন।

মাল্টা অনলাইনে কাজের ভিসা আবেদন করার নিয়ম হলো প্রথমে VFS.GLOBAL অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে Apply for visa ক্লিক করতে হবে এবং আপনার সামনে একটি ফরম আসবে ফরমটি পূরণ করে Submit করতে হবে।

ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় মালটা যাওয়ার খরচ

সর্বপ্রথম আপনাকে মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার জন্য ৬৭২০ টাকা জমা দিতে হবে। আর সরকারি এজেন্সিতে ভিসা আবেদন করার আগে ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা অগ্রিম দিতে হয় এবং বাকি টাকা পরে জমা দেওয়া লাগে। মাল্টায় ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য তিন থেকে চার লক্ষ টাকা খরচ হয়। তবে এজেন্সির মাধ্যমে গেলে আরো বেশি টাকা লাগতে পারে।

তাছাড়া আপনি মালটা ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে পারবেন। আর কম খরচে বা একদম বিনা খরচে মালটা যেতে হলে সেই দেশের কোম্পানিতে কাজ করে বা আপনার পরিচিত কেউ যদি কোম্পানির ভিসা দিয়ে থাকে তাহলে আপনি শুধু টিকেট খরচে সেই দেশে যেতে পারবেন। আর এটি আপনার নিকট আত্মীয়ের মধ্যে কেউ থাকলে তবে যাওয়া সম্ভব।

এছাড়াও আপনি মালটা যেয়ে একবার TR Card পেয়ে গেলে ইতালিতে যাওয়ার অনুমতি পাবেন। আর এই কার্ড দিয়ে আপনি ইতালি ছাড়াও ইউরোপের আরো অন্যান্য দেশ যেগুলো সেনজেনভুক্ত সেই দেশগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

মালটায় কোন কাজের চাহিদা বেশি

ইউরোপের অন্যান্য উন্নত দেশের মতোই মালটাতেও বর্তমানে কাজের চাহিদা অনেক বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি রেস্টুরেন্ট কর্মী, হোটেল বয়, রান্না করার কাজ, কনস্ট্রাকশন, ইলেকট্রিক্যাল, ড্রাইভার ইত্যাদি সকল কাজের চাহিদা অনেক বেশি রয়েছে।

মালটা ইউরোপের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র হওয়ায় এখানে পর্যটকের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এখানে যে ইংলিশ ভাষা বলাই বেশি পারদর্শী এবং হোটেলের ছোটখাটো অন্যান্য সকল কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার জন্য কাজের অভাব হবে না। আর এসব কাজে বেতন অনেক বেশি হয়ে থাকে। কাজ করার পাশাপাশি এখান থেকে আপনি বাড়তি ইনকামও করতে পারবেন।

মাল্টায় বেতন বা ইনকাম কত?

ডাক্তার পেশাদার লোকদের সবচেয়ে বেশি বেতনের কাজ হলো মালটা। বাংলা টাকায় তারা প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকার বেতন পেয়ে থাকে। তারপর যারা হোটেল বয়, ক্লিনার, শেফ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার তাদের বেতন ১.৫ লাখ টাকা হয়। এছাড়া যারা গার্মেন্টসে কাজ করে, কনস্ট্রাকশন এবং বিভিন্ন ডেলিভারির কাজ করে থাকে তারা মাসে ৯০০০০ থেকে ১ লক্ষ আবার কোন মাসে এক লক্ষ 20 হাজার টাকা বেতন উঠাতে পারে।

এগুলো ছাড়াও আপনি ইউরোপের যে কোন কান্ট্রিতে যদি কাজের ভিসায় যান তাহলে সপ্তাহে দুই দিন বন্ধ পাবেন। এই দুইদিন বাড়তি কাজ যেমন গাড়ি ধোয়া, রাস্তা পরিষ্কার করা, বাগান পরিষ্কার করা এবং স্থানীয়দের বাড়ির ছোটখাটো কাজ করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

সাধারণত মালটা যাওয়ার জন্য ভিসা আবেদন করার তিন মাস পর ভিসা পাওয়া যায়। আর একটি ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত দেশ। যে কারণে মাল্টা ভিসা আবেদন করার জন্য সর্বনিম্ন ১৮ এবং সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়সী হতে হবে। অন্যথায় এই বয়সের কম বেশি হলে আপনাকে ভিসা অনুমোদন দেয়া হবে না।

ইতিকথা : যদি আপনাদের কোন মন্তব্য থাকে এবং জানার জন্য যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনারা আমাদের কমেন্ট বক্সে লিখতে পারেন। আমরা আপনাকে যথাযথ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।